রবিবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৮

বিবাহ বিচ্ছেদ : কিছু কথা

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি-



আমাদের সমাজে দিন দিন ব্যাপকহারে বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা। শহর থেকে শুরু করে গ্রামেও এখন বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা কম নয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০৬ সালে যেখানে বাংলাদেশে প্রতি হাজারে বিচ্ছেদের হার ছিল দশমিক ৬ জন, পরবর্তীতে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে এক দশমিক ১ জন। বিচ্ছেদের আবেদনকারীদের মধ্যে যারা উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন তাদের সংখ্যা বেশি (হাজারে এক দশমিক ৭ জন)। আর অশিক্ষিতদের মধ্যে এই হার হাজারে শূন্য দশমিক ৫। অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলে বিচ্ছেদের হার যেখানে হাজারে এক দশমিক ৩ শতাংশ আর শহরে এই হার হাজারে শূন্য দশমিক ৮ জন।

কেন বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদ?

এর মধ্যে মূল কয়েকটি কারণ হচ্ছে,

১) যৌতুক

২) শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন

৩) পরকীয়া প্রেম।

প্রায় দেখা যায় এই মূল তিনটি বিষয়ের কারণে স্বামী স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটে। 

গ্রামাঞ্চলে যৌতুক এর কারণে বেশি বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে থাকে। আর শহরাঞ্চলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন ও পরকীয়া প্রেম।  এর প্রধান কারণ হচ্ছে ইসলামের সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে এসব ঘটনা অহরহ ঘটছে।

একটি সম্পর্ক তৈরী হয় বিশ্বাসের মাধ্যমে। শুরু থেকে সেই বিশ্বাসের ভিত গড়ে তুলতে হবে। না হলে পরিশেষে বিচ্ছেদ। তবে বিবাহবিচ্ছেদের প্রধান শিকার হোন সন্তানরা৷ তারা বেড়ে ওঠে ‘ব্রোকেন ফ্যামিলির' সন্তান হিসেবে৷ যা তাদের স্বাভাবিক মানসিক বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে৷ তারা এক ধরনের ‘আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে' ভোগে৷ মনোচিকিত্‍সকরা মনে করেন, ‘‘সন্তানরা যদি বাবা মায়ের স্বাভাবিক সঙ্গ এবং ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে তাদের জীবন হয়ে ওঠে অস্বাভাবিক৷ তারা সমাজকে, পরিবারকে নেতিবাচক হিসেবেই দেখে৷ তাদের মধ্যে জীবনবিমুখতা তৈরি হয়৷ যা ভয়াবহ৷''

তাহলে? এর জবাব কঠিন৷ কারণ বিবাহবিচ্ছেদ কখনো কখনো অনিবার্য হয়ে উঠতেই পারে৷ তবে স্বামী বা স্ত্রীর মনে রাখা উচিত্‍ তাদের বিচ্ছেদ যেন অন্যের জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে৷ আর নিজেদের মধ্যে শুরু থেকেই বিশ্বাসের ভিত গড়ে তুলতে হবে৷ থাকতে হবে স্বচ্ছতা৷ থাকতে হবে সহনশীলতা এবং সমঝোতার মানসিকতা৷ সিদ্ধান্ত নিতে হবে সুস্থির হয়ে৷ অস্থির সময়ে নয়৷ রাগ বা অস্থিরতার মধ্যে সিদ্ধান্ত নিলে তা আসলে অনেক সময়ই সঠিক হয় না৷

বিবাহ বিচ্ছেদ সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিসে এই বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গির কথা স্পষ্ট বর্ণনা করা হয়েছে:

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহপাকের কাছে বৈধ বিষয়সমূহের মধ্যে সবচেয়ে অপ্রিয় হল তালাক। (আবু দাউদ)

অন্য আরো একটি হাদিসে এসেছে, মুআয ইবনে জাবাল (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হে মুআয! পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলার কাছে গোলাম আযাদ করার চেয়ে প্রিয়তর কোন কিছু তিনি সৃষ্টি করেননি। আর আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে তালাক প্রদানের চেয়ে অপ্রিয় কোন কিছু সৃষ্টি করেননি। (দারে কুতনী)

অন্য একটি হাদিসে এসেছে, মাহমূদ ইবনে লবীব বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) কে জানানো হয় যে, এক ব্যক্তি একই সময়ে তার স্ত্রীকে তিন তালাক প্রদান করেছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) রাগে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেন, তোমরা কি আল্লাহর কালাম নিয়ে খেলা শুরু করে দিয়েছ, অথচ আমি তোমাদের মধ্যে বর্তমান? বর্ণনাকারী বলেন, তাকে এতই রাগান্বিত মনে হচ্ছিল যে, এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে গেল এবং বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আমি কি তাকে হত্যা করব না? (নাসায়ি)

উপরোল্লেখিত আলোচনা তালাকের পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গির বর্ণনা দেয়। তা বিবাহিত দম্পতিকে সমঝোতার একটি সুবর্ণ সুযোগ প্রদান করে এবং তাদেরকে আবেগতাড়িত ও তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে রক্ষা করে ও বাধা প্রদান করে।

প্রথমত, তা স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সমস্যার সুরাহা করার জন্যে দুইজন মধ্যস্থতাকারী আহবান করে। দ্বিতীয়ত, যদি তা ব্যর্থ হয়, তাহলে তা স্বামী ও স্ত্রীকে তিন মাসের একটি অপেক্ষার সময় (ইদ্দত) পার করতে বলে। তা তাদেরকে সমঝোতার অন্য একটি সুযোগ প্রদান করে। তৃতীয়ত, যদি স্বামী চূড়ান্তভাবে তালাক প্রদানের ইচ্ছা করে তবে তা স্ত্রীর সম্মান ও মর্যাদার পাশাপাশি তার ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করে। চতুর্থত, ইসলাম তালাক প্রদানকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কাছে সবচেয়ে অপছন্দনীয় ঘোষণার মাধ্যমে বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানটির মর্যাদা ও পবিত্রতার অনুভূতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। এসব মহৎ শিক্ষার কারণে ইসলামে বিয়ে একটি খুব টেকসই ও সুদৃঢ় প্রতিষ্ঠান এবং তালাকের মাধ্যমে তা খুব কমই নিঃশেষ হয়ে যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Whatsapp Button works on Mobile Device only

Start typing and press Enter to search