রবিবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৮

ইসলামের দৃষ্টিতে – মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ : সুন্দরী প্রতিযোগিতা

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি-



সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ।” মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ হচ্ছে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত একটি সুন্দরী প্রতিযোগিতা। যেখানে মেয়েরা পর্দাবিহীন পর-পুরুষদের সামনে জাহিলী যুগের মেয়েদের মত নিজেদের সৌন্দর্য প্রদর্শন, নাচ, গানসহ ইত্যাদি প্রতিযোগিতা করে থাকে। যা একদমই শরীয়ত বিরধী। পর্দার খেলাপ। কোন মুমিন নারী এসব প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করতে পারে না। আসুন জেনে নেই এ সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি।

পবিত্র কুর'আনে আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, 

“আর তোমরা গৃহে অবস্থান করো এবং জাহিলী যুগের মতো নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না।” [সূরা আল-আহযাব : ৩৩]


আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন,

“ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের গোপন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, কামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।” [সূরা নূর, আয়াত: ৩১]

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে :

নারীদের জন্য মাহরাম নয়, এমন পুরুষের প্রতি দেখা সর্বাবস্থায় হারাম; কামভাব সহকারে বদ নিয়তে দেখুক অথবা এ ছাড়াই দেখুক। [ইবন কাসীর]

হাদীসে এসেছে, “মহিলা হলো আওরত তথা গোপণীয় বিষয়” [তিরমিযী : ১১৭৩, সহীহ ইবনে হিব্বান : ৫৫৯৯, সহীহ ইবনে খুযাইমাহ : ১৬৮৫]

সর্বোচ্চ পর্দার জন্য আল্লাহ তায়ালা হুকুম দিয়েছেন গৃহে অবস্থান করার। যাতে পরপুরুষ চাদরে আচ্ছাদিত অবস্থায় ও না দেখতে পায়।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “নারীরা হচ্ছে চাদর এবং যদি সে গৃহের বাইরে যায় তবে শয়তান খুশি হয় (তাকে বিভ্রান্ত করতে পারবে বলে)। সে (নারী) আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে না যতটা সে গৃহে থেকে করতে পারতো।” [ইবনে হিব্বান ও ইবনে আবী খুযাইমাহ, আলবানী এটিকে সহীহ বলেছেন, সিলসিলা আস সহীহাহ ২৬৮৮]

“হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয় [মাথার দিক থেকে], এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।” (সূরা আহযাব ৫৯)

এ আয়াতে প্রয়োজনের তাগিদে মেয়েদের ঘর থেকে কিভাবে বের হতে হবে তা শিখানো হয়েছে। কোন প্রয়োজনীয় কারণে ঘর থেকে বের হওয়ার সময়ও পর্দাহীন হবে না। বরং সে সময়ও স্বীয় চেহারার উপর পর্দা টেনে নিবে। যাতে করে চেহারা কারো দৃষ্টিগোচর না হয়। কুরআনে কারীমে এমন স্পষ্ট শব্দে চেহারার উপর চাদর টেনে নেয়ার নির্দেশ থাকা সত্বেও ভিন্ন বক্তব্য দেয়ার সুযোগ আছে কি? যেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, চেহারার উপর চাদর টেনে নিবে। যাতে করে কেউ তার চেহারা দেখতে না পারে। সেখানে মুখ খুলে রাখার সুযোগ থাকার কথা কিভাবে বলা যায়?

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “ইহরাম গ্রহণকারী নারী যেন নেকাব ও হাতমোজা পরিধান না করে।” (সহীহ বুখারী ৪/৬৩, হাদীস ১৮৩৮)

এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে মেয়েরা তাদের হাত ও মুখমন্ডল আবৃত রাখতেন। এ কারণে ইহরামের সময় নেকাব ও দস্তানা না পরার আদেশ করতে হয়েছে।

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে তার হজ্বের বিবরণে বলেছেন,  ‘‘ইহরামের কারণে তারা নেকাব খোলা রাখতেন, কিন্তু যখন পুরুষেরা নিকট দিয়ে অতিক্রম করত তখন তারা মুখমন্ডল আবৃত করে ফেলতেন। তারা চলে যাওয়ার পর নেকাব তুলে ফেলতেন।’’ (মুসনাদে আহমদ ৬/৩০; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৮৩৩; সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস ১৭৫৭)

আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) বলেন, “আমরা পুরুষদের সামনে মুখমন্ডল আবৃত রাখতাম।'’ (আল মুসতাদরাক, হাকিম ১/৪৫৪)

হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, যখন কুরআনে কারীমের এ আয়াত তথা “তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। (মাথার দিক থেকে)।” (সূরা আহযাব ৫৯) নাজিল হয়, তখন আনসারী মহিলারা স্বীয় ঘর থেকে এমনভাবে বের হতো যেন তাদের মাথায় কাক বসে আছে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১০১)

আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রাহঃ) বলেন, ‘‘সঠিকতর সিদ্ধান্ত এই যে, নারীর জন্য পরপুরুষের সামনে দুই হাত, দুই পা ও মুখমন্ডল খোলা রাখার অবকাশ নেই।’’ (মাজমুউল ফাতাওয়া ২২/১১৪)

ইবনুল কাইয়িম (রাহঃ) বলেন, ‘‘নারী নামায আদায়ের সময় দুই হাত ও মুখমন্ডল খোলা রাখতে পারেন, কিন্তু এভাবে বাজারে ও লোকের সমাগমস্থলে যাওয়ার অবকাশ নেই।’’ (ই’লামুল মুয়াক্কিয়ীন ২/৪৭)

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, “নারী জাতি হল আপাদমস্তক সতর। যখনি সে বের হয়, তখনি শয়তান তাকে চমৎকৃত করে তোলে।” (সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১১৭৩, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-২০৬৫, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১৬৮৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৫৯৮)

সর্বোপরি,  উপরের আলোচনা থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, “মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ” মুসলিম নারীদের ঈমান ধ্বংসকারী একটি প্রতিযোগিতা। ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্ব সুন্দরী বলতে কিছুই নেই। তাই মুমিন নারীদের উচিৎ এই সকল দাজ্জালের ফিতনা থেকে তওবাহ করে মহান রবের নিকট ফিরে আসা। আল্লাহ্ সকল মুমিন মুসলিম বোনদের হিফাজত করুন।

1 টি মন্তব্য:

Whatsapp Button works on Mobile Device only

Start typing and press Enter to search