মঙ্গলবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

আশুরা ও মুহররম : কিছু কথা

 বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি-




মুহাররম ও আশুরা

কুরআন মজীদে ও হাদীস শরীফে এ মাস সম্পর্কে যা এসেছে তা হলএটা অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ মাস। কুরআনের ভাষায় এটিআরবাআতুন হুরুম’-অর্থাৎ চার সম্মানিত মাসের অন্যতম।
এ মাসে রোযা রাখার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘রমযানের পর আল্লাহর মাস মুহাররমের রোযা হল সর্বশ্রেষ্ঠ।
أفضل الصيام بعد رمضان شهر الله المحرم
-সহীহ মুসলিম ২/৩৬৮জামে তিরমিযী ১/১৫৭
এর মধ্যে আশুরার রোযার ফযীলত আরও বেশি।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রমযান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের সঙ্গে রোযা রাখতে দেখেছি অন্য সময় তা দেখিনি।
ما رأيت النبي صلى الله عليه وسلم  يتحرىصيام يوم فضله على غيره إلا هذا اليوم يومعاشوراء وهذا الشهر يعني رمضان
-সহীহ বুখারী ১/২১৮
হযরত আলী রা.কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিলরমযানের পর আর কোন মাস আছেযাতে আপনি আমাকে রোযা রাখার আদেশ করেনতিনি বললেনএই প্রশ্ন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জনৈক সাহাবী করেছিলেনতখন আমি তাঁর খেদমতে উপসি'ত ছিলাম। উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘রমযানের পর যদি তুমি রোযা রাখতে চাওতবে মুহররম মাসে রাখ। কারণএটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছেযে দিনে আল্লাহ তাআলা একটি জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন।’-জামে তিরমিযী ১/১৫৭
অন্য হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি আশাবাদী যেআশুরার রোযার কারণে আল্লাহ তাআলা অতীতের এক বছরের (সগীরা) গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।
صيام يوم عاشوراء أحتسب على الله أنيكفر السنة التي قبله
 -সহীহ মুসলিম ১/৩৬৭জামে তিরমিযী ১/১৫৮
আশুরার রোযা সম্পর্কে এক হাদীসে ছে যে, ‘তোমরা আশুরার রোযা রাখ এবং ইহুদীদের সাদৃশ্য পরিত্যাগ করে; আশুরার আগে বা পরে আরো একদিন রোযা রাখ।
صوموا عاشوراء وخالفوا فيه اليهود، صومواقبله يوما أو بعده يوما
-মুসনাদে আহমদ ১/২৪১
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিতনবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে ৯ তারিখেও অবশ্যই রোযা রাখব।’-সহীহ মুসলিম ১/৩৫৯
মহররম ও আশুরাকেন্দ্রিক নানা কুসংস্কার
এ মাসে পৃথিবীর বহু ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এদিনে আল্লাহ তাআলা তাঁর কুদরত প্রকাশ করেছেন। বনি ইসরাইলের জন্য সমুদ্রে রাস্তা বের করে দিয়েছেন এবং তাদেরকে নিরাপদে পার করে দিয়েছেন। আর একই রাস্তা দিয়ে ফেরাউন ও তার অনুসারীদেরকে ডুবিয়ে মেরেছেন।-সহীহ বুখারী ১/৪৮১
তবে এ দিনের গুরুত্ব প্রকাশ করতে গিয়ে অনেকে নানা ভিত্তিহীন কথাও বলে থাকেন। যেমনএদিন হযরত ইউসুফ আ. জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। হযরত ইয়াকুব আ. চোখের জ্যোতি ফিরে পেয়েছেন। হযরত ইউনুস আ. মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছেন। হযরত ইদরীস আ.কে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়। অনেকে বলেএদিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই।-আআসারুল মারফূআআবদুল হাই লাখনেবী ৬৪-১০০মা ছাবাহা বিসসুন্নাহ ফী আয়্যামিস সানাহ ২৫৩-২৫৭
এ মাসের একটি ঘটনা শাহাদাতে হুসাইন রা.। বলাবাহুল্য যেউম্মতের জন্য এই শোক সহজ নয়। কিন্তু  নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এরই তো শিক্ষা-নিশ্চয়ই চোখ অশ্রুসজল হয়হৃদয় ব্যথিত হয়তবে আমরা মুখে এমন কিছু উচ্চারণ করি না যা আমাদের রবের কাছে অপছন্দনীয়।
অন্য হাদীসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই যারা মুখ চাপরায়কাপড় ছিড়ে এবং জাহেলী যুগের কথাবার্তা বলে।
অতএব শাহাদাতে হুসাইন রা.কে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অনৈসলামিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত না হওয়া এবং সব ধরনের জাহেলী রসম-রেওয়াজ থেকে দূরে থাকা প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্য কর্তব্য।
আশুরামহররম :
এ মাসে যেসব অনৈসলামিক কাজকর্ম ঘটতে দেখা যায় তার মধ্যে তাজিয়াশোকগাঁথা পাঠশোক পালনমিছিল ও র‌্যালি বের করাশোক প্রকাশার্থে শরীরকে রক্তাক্ত করা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। এসব রসম-রেওয়াজের কারণে এ মাসটিকেই অশুভ মাস মনে করার একটা প্রবণতা অনেক মুসলমানের মধ্যেও লক্ষ করা যায়।
এজন্য অনেকে এ মাসে বিয়ে-শাদী থেকেও বিরত থাকে। বলাবাহুল্য এগুলো অনৈসলামিক ধারণা ও কুসংস্কার।
মোটকথাএ মাসের করণীয় বিষয়গুলোযখাতওবা-  স্তেগফারনফল রোযা এবং অন্যান্য নেক আমল। এসব বিষয়ে যত্নবান হওয়া এবং সব ধরনের কুসংস্কার ও গর্হিত রসম-রেওয়াজ থেকে বেঁচে কুরআন্তসুন্নাহ মোতাবেক চলাই মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন। 
[আলকাউসারমুহাররাম ৩০ হিজরী সংখ্যা থেকে গৃহীত।]

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Whatsapp Button works on Mobile Device only

Start typing and press Enter to search