সোমবার, ২ জুলাই, ২০১৮

সব প্রব্লেম স্ত্রীদের হয় কেন? স্বামীদেরই ধৈর্য ধরতে হবে কেন? অথবা স্বামীরা বলেন, আমি ঘর বাহির দুটোই সামলাবো কীভাবে?

লিখেছেনঃ Nilofa Nilo (উম্মে জাবির)


সব প্রব্লেম স্ত্রীদের হয় কেন? স্বামীদেরই ধৈর্য ধরতে হবে কেন? অথবা স্বামীরা বলেন, আমি ঘর বাহির দুটোই সামলাবো কীভাবে?

একজন মহিলাকে তার সারা জীবনে যতগুলো শারীরিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, একজন পুরুষকে কিন্তু যেতে হয় না।

একজন মেয়ে প্রতি মাসের একটা নির্দিষ্ট সময়ে ডিম্বাশয়ের হরমোন ও পিটুইটারি গ্ৰন্থির উদ্দীপক হরমোনের প্রভাবে জরায়ুর এন্ডোমেট্রিয়াম চক্রাকারে অবক্ষয়ের সম্মুখীন হয় বিধায় যোনিপথে সামান্য রক্তক্ষরণ দেখা দেয়, যেটাকে period/meanses বলে।

এই সময়ে হরমোনের পরিবর্তনের ফলে শারীরিকের পাশাপাশি মানসিক পরিববর্তনও দেখা দেয়।

আমি একজনের ব্যপারে জানি, যার ব্যপারে তার পরিবারের লোকের ধারণা হলো, "প্রতিমাসে তাদের বউকে জ্বিনে আক্রমণ করে,তাই প্রতিমাসের নির্দিষ্ট সময়ে খুব বেশি রাগান্বিত ভাব দেখা যায়"
হ্যা,এমন আরো অনেকের ব্যপারে তাদের নিজেদের মুখে শুনেছি। পিরিয়ড চলাকালীন কিছুই ভালো লাগে না, কেউ ভালো কথা বললেও খারাপ মনে হয়।পিরিয়ডের সময় নির্দিষ্ট কিছু হরমোনের ক্ষরণের ফলে মেয়েদের আচরণের পরিবর্তন হয়।

আর বেশিরভাগ মহিলায় বিয়ের দুই/এক বছরের মধ্যে 'মা' হয়ে যান, আর আমাদের দেশের বেশিরভাগ মহিলাই গৃহিণী। লক্ষ্য করুন, বিয়ের আগ পর্যন্ত একজন মেয়ে তার পরিবারের আদরের কলিজার টুকরো হয়ে থাকে। তার উপর এমন কোন দায়িত্ব থাকে না, যা তাকে পালন করতেই হবে। কিন্তু বিয়ের পরপরই তাকে স্ট্রেসে থাকতে হয়, কোনদিকে কি ভুল হয়ে যায়, কে কোন দিকে দোষারোপ করে, মোটামুটি একটা পরিবারের দায়িত্ব হঠাৎ করেই এক অনভিজ্ঞ মহিলার উপর এসে পড়ে।আমাদের সমাজে, একটা ট্রাডিশন হয়ে গেছে, নতুন বউকেই সব দায়িত্ব পালন করতে হয়, বেশিরভাগ ননদ বা শাশুড়ি ইচ্ছায় বা অনিচ্ছা বউয়ের ত্রুটি বের করতে থাকে।অনেক ক্ষেত্রে শাশুড়ি মা ভালো হলেও আশেপাশের প্রতিবেশিরা এসে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় বউয়ের বিরুদ্ধে এটা সেটা জিজ্ঞাস করে শাশুড়িকে উসকায়।আমি শাশুড়ি, বা ননদ বা প্রতিবেশিদের খারাপ বলছি না, এটাই প্রথা হয়ে গেছে। একজন সদ্য বিবাহিত নারী যে কাল পর্যন্ত বাবা মায়ের কলিজার টুকরো ছিলো, সে হঠাৎ করেই অতিরিক্ত স্ট্রেসের মধ্যে প্রতিটি মুহূর্ত অতিবাহিত করে যায়।

অন্যদিকে নতুন বিবাহিত স্ত্রী হিসেবে, স্বামীর অতিরিক্ত আহ্লাদ,অতিরিক্ত ভালোবাসায় অভ্যস্ত হয়ে উঠে। মেয়েটি যখন প্রেগন্যান্ট হয়, কেয়ার, ভালোবাসা বহুগুণে বেড়ে যায়, মা হওয়ার আগ পর্যন্ত অতিরিক্ত যত্নে, ভালোবাসায় থাকা মেয়েটি হঠাৎ করেই নিজের কলিজার টুকরো সন্তানকে নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় মানসিক যন্ত্রণায় ভোগে।সারারাত জেগে বাচ্চার যত্ন নিতে হয়, এমন অনেক রাত কাটে কান্নারত বাচ্চাকে কোলে নিয়ে, সকালে স্বামীর অফিস আছে, যাতে স্বামীর ঘুমের ব্যাঘাত না হয়, বাচ্চাকে কোলে নিয়ে অন্য কক্ষে চলে যেতে হয়।

যদি স্বামী হেল্পফুল না হন, তবে চাকরিজীবী মহিলাদের ঘর, বাহির দুটোই সমানভাবে সামলাতে হয়। অফিসে থেকেও দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়, বাসায় গিয়ে এই কাজ করতে হবে, সেই কাজ করতে হবে, বাচ্চারা ঠিকমতো খাচ্ছে কি না, ঘুমাচ্ছে কি না, ভালো আছে কি না!! এসব দুশ্চিন্তা একজন মহিলা না চাইলেও অটোমেটিক চলে আসে।

আমি অনেক বয়স্ক মহিলাকে বলতে শুনেছি "গাছ ফেটে গোলা(ফল) বের হওয়া সোজা কথা নয়"
হুম মা হওয়া সোজা কথা নয়, একটা মহিলা মা হওয়ার পর, মানসিক পরিবর্তনের পাশাপাশি কিছু এক্সট্রা হরমোনের পরিবর্তন হয়, যা মেয়েদের মানসিকতার উপর বিরাট প্রভাব ফেলে।

এই হরমোনের পরিবর্তন গুলো এবং অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা একটা মহিলাকে মারাত্মক ডিপ্রেশনের মধ্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট।

আর এর কোনটিই কিন্তু স্বামীকে মোকাবেলা করতে হয় না। একজন মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে সবচেয়ে আপন, তার স্বামী। মেয়েটি তার ভালো লাগা, মন্দ লাগা, শারীরিক-মানসিক অশান্তি সবকিছু শুধুমাত্র স্বামীর সাথেই শেয়ার করে। এমনকি নিজের রাগটাও পরিবারের অন্য সদস্যদের সামনে চেপে রেখে শুধু স্বামীর কাছেই প্রকাশ করে। শত কষ্টে, শত অশান্তিতেও পরিবারের অন্যান্য কাজ করার স্ট্রেস নিয়ে কাজ গুলো করে যায়।

মানে স্ত্রীর শারীরিক -মানসিক অবস্থা অন্য কেউ জানুক আর না জানুক স্বামী অবশ্যই জানতেছেন। সুতরাং আপনি স্বামীটিরই উচিৎ নয় কি? আপনার স্ত্রীর পাশে থেকে তাকে মেন্টাল সাপোর্ট দেওয়া। ভালোবাসা, যত্ন করা, প্রয়োজনে পরিবারের অন্য সদস্যদের সতর্ক করা, সচেতন করা। তার দুঃখটা বুঝা। অন্য কেউ না জানুক আপনি তো জানেন আপনার স্ত্রী কেমন। অন্য কেউ ভুল বুঝলেও আপনার তাকে বুঝা উচিৎ।

জানেন, স্ত্রীদের যদি স্বামীরা সাপোর্ট করেন তাহলে তাকে অন্য কেউই কিছু বলতে পারে না।

আপনি বলতে পারেন, আমি ঘর বাহির দুটোই কীভাবে সামলাবো? আপনাকে সামলাতে হবে, আপনার সন্তান এবং আপনার স্ত্রীর সুস্থতার জন্য। আপনার স্ত্রীর সুস্থতা মানে আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুস্থতা।

বেশিরভাগ পুরুষই অফিস বা কাজ শেষে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেন। শুক্রুবার শুয়ে, বসে সময় কাটান। আপনি চাইলেই কিন্তু অফিস শেষেই বাসায় চলে আসতে পারেন, তাকে হেল্প করুন; হউক না ছোট একটি কাজে, কিন্তু এটা তার জন্য অনেক বড় এবং পরম আনন্দের।

পরিবারের অন্য সদস্যদের বুঝানোর দায়িত্বও কিন্তু আপনার, যেন তার উপর অতিরিক্ত প্রেসার না দেয়। আপনার পরিবার, আপনিই ভালো বুঝবেন, তাদের কী বলে মানাতে বা বুঝাতে হবে।

জানেন?

“একটি মেয়ে শ্বশুর বাড়িতে যত কষ্টেই থাকুক না কেন, যদি স্বামীর ভালোবাসা পায় সে সব কষ্টই হাসিমুখে মেনে নিয়ে সমস্ত ডিপ্রেশনকে ওভারকাম করতে পারে!”

সুতরাং আপনি স্বামীরই উচিৎ তাকে সর্ববস্থায় মেন্টাল সাপোর্ট দেওয়া যাতে সে মারাত্মক কিছু ডিপ্রেশন জণিত রোগ থেকে মুক্ত থাকে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Whatsapp Button works on Mobile Device only

Start typing and press Enter to search