শনিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৮

ইসলামিক দৃষ্টিতে পারিবারিক বিপর্যয় রোধে আপনার করণীয়

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি-


পাশ্চাত্যে বহু আগেই পারিবারিক প্রথা ভেঙ্গে পড়েছে। সেই ঢেউয়ের প্রচন্ড অভিঘাত আমাদের পারিবারিক ব্যবস্থার উপরও আছড়ে পড়ছে প্রতিনিয়ত। অবাধ নারী স্বাধীনতার নামে আমাদের দেশের নারীদেরকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টা চলছে পুরোদমে।

আজকে আমাদের পারিবারিক ব্যবস্থা মহাবিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে চলেছে। সময় থাকতে আমাদেরকে এখুনি এ ব্যাপারে সাবধান হতে হবে। পারিবারিক বিপর্যয় রোধে গ্রহণ করতে হবে কার্যকর ব্যবস্থা । নিম্নে এ সম্পর্কে কিছু সুপারিশ উপস্থাপন করা হলো।

১. আমাদের সমাজের নারী-পুরুষ বিশেষত যুবক-যুবতীদের দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ আমূল পরিবর্তন করতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে, পাশ্চাত্যের বস্ত্তবাদী ও ভোগবাদী সমাজ ও পরিবার মুসলমানদের সমাজ ও পরিবারের জন্য কোন দিক দিয়েই আদর্শ ও অনুসরণীয় হতে পারে না। আমাদের আদর্শ হচ্ছে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর গড়া ইসলামী সমাজ ও পরিবার ব্যবস্থা। ইউরোপীয় সমাজ ও পরিবারের রীতি-নীতি শুধু পারিবারিক বিপর্যয়েরই সৃষ্টি করে না, মানুষকে পশুর চাইতেও নিকৃষ্ট চরিত্রের বানিয়ে দেয়। অতএব, তাদের অন্ধ অনুকরণ করে আমরা কোনক্রমেই পশুত্বের স্তরে নেমে যেতে পারি না।

২. অসৎ সঙ্গে মিশে ছেলে-মেয়ে যাতে নষ্ট না হয়ে যায় সেদিকে পরিবারের অভিভাবক ও সদস্যদের তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখতে হবে। তারা কার সাথে চলাফেরা, উঠাবসা, খেলাধূলা ও বন্ধুত্ব স্থাপন করে সে বিষয়ে খোঁজখবর নিতে হবে। এক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিম্নোক্ত হাদীসটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

عَنْ أَبِىْ مُوْسى، قَالَ قَالَ رَسُوْلُ للهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَثَلُ الْجَلِيْسِ الصَّالِحِ وَالسُّوْءِ، كَحَامِلِ الْمسْكِ وناَفِخِ الْكِيْرِِ؛ فَحَامِلُ الْمِسْكِ إمَّا أنْ يُحْذِيَكَ وَإِمَّا أَنْ ةَبْةاَعَ مِنْهُ، وَإِمَّا أَنْ ةَجِدَ مِنْهُ رِيْحًا طَيِّبَةً؛ وَنَافِخُ الْكِيْرِ إمَّا أنْ يُحْرِقَ ثِيَابَكَ، وَإِمَّا أَنْ ةَجِدَ مِنْهُ رِيْحًا خَبِيْثَةً.

আবূ মূসা আশ‘আরী (রা) বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘‘সৎ সঙ্গ ও অসৎ সঙ্গের দৃষ্টান্ত হচ্ছে সুগন্ধি বিক্রেতা ও কামারের হাপরে ফুঁ দানকারীর মতো। সুগন্ধি বিক্রেতা হয়তো তোমাকে এমনিতেই কিছু দিয়ে দেবে অথবা তুমি তার কাছ থেকে কিছু ক্রয় করবে অথবা তার সুঘ্রাণ তুমি পাবে। আর কামারের হাপরে ফুঁ দানকারী হয় তোমার কাপড় জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেবে নতুবা তার দুর্গন্ধ তো তুমি পাবেই।’

৩. ছোটবেলা থেকেই ছেলে-মেয়েদের পোষাক-পরিচ্ছদের প্রতি খেয়াল রাখা।

৪. উপযুক্ত বয়সে ছেলে-মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

৫. সু্ন্দরী প্রতিযোগিতা ও ফ্যাশন শো'র নামে নারী দেহের নগ্ন প্রদর্শনী বন্ধ করতে হবে। সাথে সাথে অশ্লীল গান, নৃত্য ও নাচ পরিহার করতে হবে।

৬. বেশ্যাবৃত্তির লাইসেন্স প্রদান বন্ধ করে অবাধ যৌনতার পথ রুদ্ধ করতে হবে।

৭. যৌতুক নামক পরিবার বিধ্বংসী প্রথা বন্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে এবং এ ব্যাপারে গণসচেনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

৮. অশ্লীল বই-পত্র ও ম্যাগাজিন বাজেয়াপ্ত করতে হবে।

৯. মেয়েদের জন্য পৃথক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

১০. পর্দা প্রগতির অন্তরায় নয়; বরং তা শালীনতা, শুচি-শুভ্রতার প্রতীক এবং নারী নির্যাতন,ইভটিজিং, এসিড নিক্ষেপ প্রভৃতি রোধের কার্যকর উপায়। সুতরাং মেয়েদেরকে ছোটবেলা থেকেই পর্দার বিধান মেনে চলার জন্য উৎসাহিত করতে হবে।

১১. নারী-পুরুষ উভয়েই যাতে স্ব স্ব অবস্থানে থেকে দেশ ও জাতির উন্নয়নে কাজ করতে পারে সে লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

পরিশেষে বলা যায়, 

ইসলামে পরিবার ও পারিবারিক জীবনের গুরুত্ব অপরিসীম। ‘‘শরীরের মধ্যে একটি গোশতপিন্ড রয়েছে। যদি তা সুস্থ-স্বাভাবিক থাকে তাহলে গোটা শরীর সুস্থ-স্বাভাবিক থাকে।

আর যদি তা অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে সমস্ত শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে। ঐ গোশতপিন্ডটি হচ্ছে হৃদয়।’’ সুতরাং পরিবার যদি ঠিক হয়ে যায় তাহলে সমাজ ঠিক হয়ে যাবে। আর সমাজ ঠিক হয়ে গেলে রাষ্ট্রও ঠিক হয়ে যাবে। সেজন্য পরিবার ও পারিবারিক জীবনকে স্বর্গীয় আভায় আলোকিত করার লক্ষ্যে ইসলাম এতদসংক্রান্ত নানাবিধ দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে।

সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে। তাই একটি আদর্শ পরিবার গঠনের জন্য ধার্মিকা ও চরিত্রবতী স্ত্রী বেছে নেয়ার জন্য কুরআন মাজীদ ও সহীহ হাদীসে নানাভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে।

পরিবারকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ইসলাম সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়েছে। তাই তালাকের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদের ব্যবস্থা সেখানে থাকলেও তার পূর্বে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দ্বন্দ্ব-কলহ নিরসনের নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেসব উদ্যোগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলে একই ছাদের নিচে অসুখী জীবন যাপনের চেয়ে পরিবার রক্ষার উদ্দেশ্যেই ইসলামে তালাক বিধিসম্মত করা হয়েছে। ইসলামে তালাক অনেকটা তেতো ঔষধ সদৃশ, যা অনিচ্ছা সত্ত্বেও কখনো কখনো গিলতে হয়।

পশ্চিমা সমাজে পরিবারপ্রথা বিলুপ্তির পথে। তথাকথিত নারী নেত্রী ও উদার বুদ্ধিজীবীদের (!) কল্যাণে নারী স্বাধীনতা, নারী অধিকার, নারীর মানোন্নয়ন, নারীকে স্বাবলম্বী করা ইত্যাদি প্রতারণাপূর্ণ এজেন্ডার মাধ্যমে সেই ঢেউ আমাদের সমাজেও লেগেছে। আজকে পাশ্চাত্যের ন্যায় আমাদের মাঝেও এ এ্যানথ্র্যাক্স জীবাণু ছড়ানোর চেষ্টা চলছে যে, পরিবার মানে কেবল স্বামী-স্ত্রী। বাবা-মা, দাদা-দাদী, নানা-নানীর সেখানে কোন স্থান নেই। এভাবে আমিত্বের বিষবাষ্পে জর্জরিত করে পরিবারকে ধ্বংসের পাঁয়তারা চলছে।

অন্যদিকে নারী স্বাধীনতার নামে নারীদেরকে রাস্তায় বের করে উলঙ্গ করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। নারীর নিরাপত্তার প্রতীক পর্দা প্রথার বিরুদ্ধে নানাভাবে বিষোদগার করা হচ্ছে। অথচ একজন বিধর্মী লেখক বলেছেন, ‘‘একজন বেপর্দা নারী মুসলমানদের জন্য এক হাজার কামানের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক।”

পাশ্চাত্য সমাজ যখন নারীকে তার মূল দায়িত্ব তথা সন্তান-সন্ততি প্রতিপালন ও গার্হস্থ্য ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত করার জোর দাবি জানাচ্ছে তখন নারীকে চাকুরী করতেই হবে এমন গোলকধাঁধায় ফেলে আমাদের পরিবারগুলোকে নরকের আগুনে দাউ দাউ করে প্রজ্জ্বলিত করার নগ্ন পাঁয়তারা অব্যাহত রয়েছে।

এভাবে সন্তানকে বঞ্চিত করা হচ্ছে মাতৃস্নেহ থেকে এবং স্বামীকে বঞ্চিত করা হচ্ছে স্ত্রীর আদর-সোহাগ থেকে। এ বিষয়ে আমাদের আরো সতর্ক ও সাবধান হতে হবে। অন্যথা পাশ্চাত্যের মত আমাদেরকেও এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হবে। আল্লাহ আমাদের পরিবারগুলোকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করুন। আমীন।

Whatsapp Button works on Mobile Device only

Start typing and press Enter to search