বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি-
কুরবানির গোশত তিন ভাগে বন্টন করার কোন ভিত্তি নেই..
আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন বলেন-
‘তোমরা কুরবানির গোশত নিজে খাও এবং দুঃস্থ, অভাব গ্রস্থকে খাওয়াও। ' [সূরা হজ্জ্বঃ ২৮]
রাসূলুল্লাহ (সা.) কুরবানীর গোশত সম্পর্কে বলেছেন-
‘তোমরা নিজেরা খাও ও অন্যকে আহার করাও এবং সংরক্ষণ কর।’ (বুখারী, হাদীস নং ৫৫৬৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৭১)।
অতএব বুঝা গেল কুরবানির গোশত নিজে খাবে আর অভাবী লোককে দিতে হবে।
কিন্তু আমাদের সমাজে আত্মীয়-স্বজনের ভাগটা কেন এত জোরালো ভাবে বসে গেল?
হ্যাঁ, আত্মীয়-স্বজন গরীব হলে তাকে অবশ্যই গোশত দান করা যাবে।
কতটুকু নিজেরা খাবে, কতটুকু দান-সাদকা করবে বা হাদিয়া দিবে :
এ সম্পর্কে কুরআন-সুন্নাহতে কিছু বর্ণিত হয়নি। এই ব্যাপারটি নির্ভর করে আপনার ত্বাকওয়ার উপর। আপনার পরিবারে লোকজন কম তাহলে আপনি ৪০ কেজির গোশতের ১০ কেজি রাখেন আর ৩০ কেজি দান করে দিন।
আপনি তো ধনী মানুষ, প্রয়োজনে আবার গোশত কিনে খেতে পারবেন।
কিন্তু গরিব-অভাবী মানুষ ৪৫০/- কেজি গরুর মাংস মাসের পর মাস কিনে খেতে পারে না।
আবার যদি আপনার পরিবারে লোকজন বেশি হয় তাহলে ৪০ কেজির গোশতের ২০ কেজি রাখেন আর ২০ কেজি দান করে দিন। এভাবে একটা হিসাব করে আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করুন।
যদি আপনি গোশতের লোভে কুরবানি দেন, আর বেশির ভাগ গোশত ফ্রিজে রেখে দেন তাহলে তা আল্লাহ্ কি বুঝেন না? আপনি কাকে ফাঁকি দিতে চাচ্ছেন?
মনের মধ্যে সংকীর্ণতা রেখে তো কুরবানি হবে না। এটা ত্বাকওয়ার ব্যাপার।
কেউ চাইলে সে তার কুরবানীর সম্পূর্ণ গোশতকে বিতরণ করে দিতে পারবে।
কুরবানীর গোশত হতে অমুসলিম অভাবী হলে তাকেও দেয়া যায়, তাকে ইসলামের প্রতি অনুরাগী করার জন্য দেওয়া বৈধ। আর তা ইসলামের এক মহানুভবতা। (মুগনী, ১৩/৩৮১; ফাতহুল বারী, ১০/৪৪২)
কুরবানীর পশুর গোশত, চামড়া, চর্বি বা অন্য কোন কিছু বিক্রি করা জায়েয নয়। কসাই বা অন্য কাউকে পারিশ্রমিক হিসেবে কুরবানীর গোশত দেয়া জায়েয নয়। হাদিসে এসেছে-
‘তার প্রস্তুত করণে তার থেকে কিছু দেয়া হবে না।’ (বুখারী- ১৭১৬ সহীহ মুসলিম- ১৩১৭)
তবে কসাইকে দান বা উপহার হিসেবে কিছু দিলে তা বৈধ হবে।
আমাদেরকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে ইখলাসের সাথে একমাত্র তাঁরই সন্তুষ্টির লক্ষ্যে কুরবানী আদেশ করেছেন, তাই আমাদের এই কুরবানি যেন লোক দেখানো না হয়, অন্যথায় কোন ফলাফল পাওয়া যাবে না।