বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি-
লিখেছেনঃ আকতার বিন আমীর
ঈদ আসলেই কখনো রোজা, কখনো চাঁদ, কখনো আরাফার সিয়াম আবার কখনো ভাগা কুরবানী নিয়ে অহেতুক বিতর্ক শুরু হয়! কতই না উত্তম হত এক্ষেত্রে আমরা যদি নিজের টা ছুড়ে ফেলে দিয়ে সালাফদের বুঝটি গ্রহণ করতাম।
#পর সমাচার
আমি যতটুকু জেনেছি আলেমদের বক্তব্য ও লিখনি থেকে, তাতে একথা স্পট যে, সালাফদের মধ্যে কেউই ভাগা কোরবানীকে সফরের সাথে খাস করেন নি!
এক্ষেত্রে পূর্ববর্তী ও বর্তমান ওলামাদের ফতওয়া হচ্ছে- একটি পরিবারের পক্ষ থেকে একটি কোরবানী হচ্ছে সুন্নাহ (এটাকেই তারা তারজিহ দিচ্ছেন) , আর ভাগা কোরবানীর বিষয়টি দলিল দ্বারা সাব্যস্ত, হোক সেটা সফর অথবা মুকিম, উভয় অবস্থাতেই তা জায়েজ রয়েছে "।
আজকাল গরুর গোশত খাওয়ার যে হিড়িক পড়েছে তাতে সামর্থবান হওয়ার পরেও ভাগে কোরবানী দেওয়াটাই যেন অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে! অথচ ১২/১৫ হাজার টাকায় গরুর শরিকানায় না গিয়ে,
৮/১০ হাজার টাকার মধ্যে মোটা-তাজা ছাগল কোরবানী করা যেত!
আমরা গরুকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে জায়েজের পিছনে দৌড়াচ্ছি অথচ উচিত ছিল ছাগলকে অগ্রাধিকার দিয়ে সুন্নাহর পিছনে দৌড়ানো!
এইজন্যই উস্তায মতিউর রাহমান মাদানি হাফিঃ বলেছেন - “জায়েজের বিষয়টি সবার শেষে রাখুন, আগে সুন্নাহকে অগ্রাধিকার দিন!”
অত্যান্ত দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের দেশের কতিপয় আলেমগন এই বিষয়টি নিয়ে চরম বাড়াবাড়ি করেছেন! কারো কারো বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে যেন, একটি পরিবারের পক্ষ থেকে একটি কোরবানী সুন্নাহ পক্ষান্তরে ভাগা কোরবানী এক্কেবারেই নাজায়েজ!
আবার কেউ কেউ ভাগা কোরবানীকে "শক্তভাবে জায়েজের" পক্ষে ব্যাপক প্রচারণার ফলে গোটা পশু কোরবানীর বিষয়টি হাল্কা হয়ে যাচ্ছে!
শরিয়তে সেখানে প্রশস্ততা রয়েছে সেখানে সীমাবদ্বতা আরোপ করা ঠিক নয়! আমাদের উচিত ছিল, সুন্নাহকে তার আপন জায়গায় রেখেই জায়েজের বিষয়টি খোলাসা করে জানিয়ে দেওয়া এবং একটি জায়েজ বিষয়কে "নাজায়েজ" প্রমাণের উদ্ভট যুক্তিগুলো পরিহার করা!
একটা মোদ্দা কথা অন্তরে গেঁথে রাখুন- “একটি সুন্নাহ সম্মত আমল একটি জায়েজ আমলের চাইতে হাজারগুণ উত্তম " কেননা জায়েজ হলেও তা উত্তমতার খেলাফ!”
সুতরাং আমাদের বক্তব্য, লিখনিতে পড়ে আম জনতা যেন "জায়েজ আমলকে" সুন্নাহর পর্যায়ে না নিয়ে যায় অথবা সুন্নাহকে হাল্কা মনে না করে সেদিকেও খেয়াল রাখা জরুরী!
আমাদের কর্তব্য হল- সুন্নাহর ব্যাপারে মানুষকে বেশি বেশি উৎসাহিত করা অর্থাৎ উত্তমতার দিকে আহবান করা আার জায়েজকে ( যা উত্তমতার খেলাফ) তার আপন জায়গায় রেখেই এড়িয়ে চলা! কেননা,আপনি যখন জায়েজকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করবেন, অবশ্যই সেখানে সুন্নাহর গুরুত্ব কমে যাবে! পক্ষান্তরে, সুন্নাহ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যদি "জায়েজ" বিষয়কে "হারাম" বানিয়ে ফেলেন তাহলে আপনার গুরুত্বই কমে যাবে! কেননা,এটা চরম বাড়াবাড়ি ও বিভ্রান্তিকর এবং "সালাফদের বুঝের" খেলাফ। এই একগুঁয়েমি থেকে অতিসত্বর ফিরে আসা উচিত!
সর্বশেষ, দ্বীনের দ্বায়ীদের উদ্দেশ্যে ইমাম নাসিরুদ্দিন আল আলবানি (রহঃ) একটি চমৎকার কথা দিয়ে শেষ করছি! ঈমাম রাহঃ বলেছেন-
الحق ثقيل فلا نثقله بأسلبونا ‘হক স্বভাবতই ভারী।
الحق ثقيل فلا نثقله بأسلبونا ‘হক স্বভাবতই ভারী।
সুতরাং আমরা আমাদের পদ্ধতি দ্বারা (দাওয়াতী ময়দানে কঠোরতা অবলম্বন করে) তাকে আরো ভারী করতে পারি না’।
আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের সকলকে তাফরীদ্ব ও ইফরাদ্ব থেকে মুক্ত রাখুন- আমিন!